ঢাকা, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

এক প্রকৌশল বিষ্ময়!

‘বুর্জ খলিফা’ দ্য টলেস্ট ম্যান মেড স্ট্রাকচার

প্রকাশিত: ১২:২১, ২১ নভেম্বর ২০১৮  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

 

বুর্জ খলিফা যার পূর্ব নাম ছিল বুর্জ আল আরব। এটি পৃথিবীর উচ্চতম ইমারত। এটিকে ‘দ্য টলেস্ট ম্যান মেড স্ট্রাকচার’ও বলা হয়। বিশ্বের এই গগণচুম্বী ইমারত সংযুক্ত আরব আমিরাতকে দিয়েছে এক অনন্য গৌরব এবং সমৃদ্ধি।

কিন্তু এই গৌরব এবং সমৃদ্ধি কিন্তু একদিনে আসেনি। এই দৈত্যাকার বুর্জ খলিফার নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০০৪ সালে এবং শেষ হয় ২০১০ সালে অর্থাৎ এটি নির্মাণে প্রায় ৬ বছর লেগেছে।

1.বুর্জ খলিফা- এক প্রকৌশল বিষ্ময়!

একটি ইমারত তৈরিতে ৬ বছর সময় লেগেছে অর্থ্যাৎ এটা ধারণা করতেই পারি যে, কত সুচারু এবং বিলাসবহুলভাবে এটিকে তৈরি করা হয়েছে! এর পূর্বে অর্থাৎ ২০০৩ সালে এমার প্রোপার্টিস এর মালিক মুহাম্মাদ আলি আলাব্বর এটিকে বানানোর প্রস্তাব রাখেন।আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, এই ভবনটিকে বানাতে দেড় বিলিয়ন ইউএস ডলার বা বাংলাদেশি টাকায় ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে।সাউথ কোরিয়ার কোম্পানি স্যামসাং ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কন্সট্রাকশন কে এটি নির্মাণের দায়িত্বভার দেয়া হয়। এই বিখ্যাত কোম্পানিটি এর আগে চীনের তাইপেই-১০১ এবং নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার নির্মাণ করে।

2.বুর্জ খলিফা- এক প্রকৌশল বিষ্ময়!

উল্লেখ্য, বুর্জ খলিফার আগে চীনের তাইপেই-১০১ ছিলো বিশ্বের উচ্চতম ইমারত।বুর্জ খলিফা নির্মাণে প্রতিদিন নিরলসভাবে ১২হাজার শ্রমিক কাজ করেছে।এটি তৈরিতে ১০ হাজার মেট্রিক টন কংক্রিট এবং ৩৯ হাজার মেট্রিক টন স্টিল ব্যবহৃত হয়েছে।এখানে যে পরিমাণ অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেম ব্যবহার করা হয়েছে তার সঙ্গে ৫ টি A380 এয়ারবাসের তুলনা করা যেতে পারে৷প্রথমে বুর্জ খলিফার নাম বুর্জ আল দুবাই রাখা হয় কিন্তু ইউনাইটেড আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট এবং আবুধাবির শাসক শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সম্মানে একে পরবর্তীতে বুর্জ খলিফা রাখা হয়৷

3.বুর্জ খলিফা- এক প্রকৌশল বিষ্ময়!

বিশ্বের উচ্চতম এই ভবনের উচ্চতা ৮২৯ মিটার বা ২ হাজার ৭৭২ ফুট কিংবা আধা মাইল। আমরা সবাই জানি বুর্জ খলিফা ১৬০ তলা কিন্তু তথ্যটি পুরোপুরি সঠিক নয়৷ভবনটি মূলত ২০৮ তলা। এর মধ্যে ১৬০ তলা বসবাসের জন্য, ৪৬ তলা কারিগরি কাজের জন্য এবং দু’টি তলা রয়েছে পার্কিং এর জন্য। বুর্জ খলিফার ওজন আনুমানিক ৫ লাখ টন। ১৬০ তলা বিশিষ্ট এই ভবনটি দেখতে অনেকটা রকেটের মতো। এটি উচ্চতায় আইফেল টাওয়ারের চেয়েও তিনগুণ এবং এম্পায়রস স্টেট বিল্ডিংয়ের চেয়ে দ্বিগুণ লম্বা। এটি এতটাই উঁচু যে এটির চূড়াকে ৯৫ কি.মি. দূর থেকেও দেখা যায়। এতে বসবাসের জন্য ১৬০ টি ফ্লোর রয়েছে এবং এটির সর্বোচ্চ উঁচু ফ্লোর থেকে প্রতিবেশী দেশ ইরাককে দেখতে পাওয়া যায়।

4.বুর্জ খলিফা- এক প্রকৌশল বিষ্ময়!

বুর্জ খলিফার উপরের ফ্লোর গুলোতে ২ মিনিট বেশি সময় ধরে সূর্য দেখা যায়। তাই রমজানে ৮০ তলার উপরের ফ্লোরগুলোর বাসিন্দাদের ২ মিনিট বেশি রোজা রাখতে হয়। বুর্জ খলিফার উপরের ফ্লোরগুলোতে সবসময় নিচের ফ্লোরগুলোর চেয়ে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি কম থাকে। গ্রীসের হাইম্যানোক্যালিস নামে একটি ফুলের অনুকরণে তৈরীকৃত এই বিল্ডিং বিশ্বের সবচেয়ে মনোরম বিল্ডিংও বটে। ২৮ হাজার ২৬১ টি গ্লাস প্যানেল দিয়ে এটিকে সাজানো হয়। এই গ্লাসগুলো বুর্জ খলিফাকে দুবাইয়ের তীব্র রোদ, গরম হাওয়া এবং ঝড়-বৃষ্টি থেকে রক্ষা করে। যদি এই গ্লাস প্যানেলগুলোকে নামিয়ে মাটিতে সাজানো হয় তবে তা ১৭ টি ফুটবল গ্রাউন্ডের সমান হবে। প্রবল ভূমিকম্প সহনীয় এই বুর্জ খলিফার নামে ১০ টি ওয়ার্ল্ড রেকর্ড রয়েছে।

5.বুর্জ খলিফা- এক প্রকৌশল বিষ্ময়!

যেমন, পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু নির্মাণ, সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ফ্লোর, সবচেয়ে উচ্চতম অধিকৃত ফ্লোর, পৃথিবীর উচ্চতম শহর প্রদর্শন কেন্দ্র (১৪৮ তম ফ্লোরে অবস্থিত), পৃথিবীর উচ্চতম স্থানে নাইট ক্লাব (১৪৪ তম ফ্লোরে অবস্থিত), পৃথিবীর উচ্চতম স্থানে রেস্টুরেন্ট ( ১২২ তম ফ্লোরে অবস্থিত) এবং ১৫৮ তম ফ্লোরে অবস্থিত পৃথিবীর উচ্চতম মসজিদ। বুর্জ খলিফাতে ৩ হাজারটি পার্কিং স্পেস, ৩০০ টি হোটেল, ৯০০ টি এপার্টমেন্ট এবং ৩৭ টি অফিস স্পেস রয়েছে। এর চারিদিকে কৃত্রিম ঝিল দিয়ে ঘেরা। এছাড়াও ৫৭ টি এলিভেটর বা লিফট আছে যেগুলো পৃথিবীর দ্রততম লিফট এবং এগুলোর গতিবেগ ৪০ মাইল প্রতি ঘন্টায় বা ৩৩ ফুট প্রতি সেকেন্ডে। গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে টপ ফ্লোরে যেতে সময় লাগে মাত্র ১ মিনিট।

6.বুর্জ খলিফা- এক প্রকৌশল বিষ্ময়!

পুরো বিল্ডিংটিতে ১৭ হাজার দরজা এবং ২৪ হাজার ৩৪৮ টি জানালা রয়েছে। এই বিল্ডিংয়ে সারাদিনে ৯ লাখ ৮৬ হাজার লিটার পানির প্রয়োজন হয়। এখানকার এয়ার কন্ডিশনার থেকে সারা বছর যে পরিমাণ পানি বের হয় তা দিয়ে ২০ টি অলিম্পিক সুইমিংপুল ভর্তি করা যাবে। বুর্জ খলিফাতে প্রতিদিন ৩ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয় যেটি দ্বারা বাইরের তিনহাজার বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব।বুর্জ খলিফার একইসঙ্গে ৩৫ হাজার মানুষ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন।বুর্জ খলিফার দামের ব্যাপারে সকলের মনেই প্রশ্ন উঠাটা স্বাভাবিক! কিন্তু বুর্জ খলিফার পুরো দাম জানা সম্ভব না হলেও এর একটি কামরার জন্য প্রতি বর্গমিটারে গুণতে হবে প্রায় ৩৭ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার।

7.বুর্জ খলিফা- এক প্রকৌশল বিষ্ময়!

বুর্জ খলিফা শুধু দুবাই বা আরব আমিরাত নয় সারা বিশ্বেরই গৌরব। তবে অবাক করার মতো ব্যপার হলো, ২০২০ সালে সৌদি আরবের জেদ্দাতে বুর্জ খলিফার চেয়ে উঁচু একটি ভবন নির্মিত হতে চলেছে। যেটির উচ্চতা হবে ৩ হাজার ৩০৭ ফুট এবং জাপানে ২০৪৫ সালে নির্মিত হবে স্কাই মাইল টাওয়ার যেটির উচ্চতা হবে ৫ হাজার ২৪৯ ফুট যেটি বুর্জ খলিফার উচ্চতার প্রায় দ্বিগুণ।

নিউজওয়ান২৪/আরএডব্লিউ